কুমিল্লা প্রতিনিধি, দৈনিক নোয়াখালী সময় ডট কম: শুল্ককর ফাঁকি ও চোরাচালান রোধে কাজ করছে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেট। মহাসড়কে চলছে সাঁড়াশি অভিযান। গত তিনমাসে মহাসড়ক থেকে ১৯টি কার্ভাড ভ্যান ও ট্রাক আটক করে মামলা করা হয়েছে। আটক করা পণ্যের মধ্যে ১৫টি গাড়ির চালানে বন্ড সুবিধার (কাপড় ও এলডিপিই দানা) অপব্যবহার করা পণ্য। এছাড়া রয়েছে শিশুদের জন্য ক্ষতিকর গুড়ো দুধ, ভারতীয় চা পাতা, শাড়ি ও থ্রি পিস। শুল্ককর ফাঁকির অভিযোগে ইতোমধ্যে ৪টি কার্ভাড ভ্যানে আটটি মামলায় ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনারেটের সহকারী কমিশনার (সদর) মোহাম্মদ ছালাউদ্দিন রিপন এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, মূলত চোরাচালান ও শুল্ককর ফাঁকি নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যে এ বড় ধরনের জরিমানা আরোপ করা হয়। গত তিন মাসে ১৯টি কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক আটক করে মামলা করেছে কুমিল্লা কাস্টমস প্রিভেনটিভ টিম। আইন ভঙ্গের আনীত অভিযোগ স্বীকার করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো কমিশনার বরাবর সংক্ষিপ্ত বিচারের মাধ্যমে ন্যায় নির্ণয়নের আবেদন করলে ৮টি মামলায় ২৫ লাখ ৫০ হাজার জরিমানা আরোপ করেন। প্রতিষ্ঠানগুলো জরিমানা ও শুল্ক করের টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে ট্রাকগুলো খালাস নিয়েছে। তিনি বলেন, দিনরাত পরিশ্রম ও সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে অবৈধভাবে পণ্য পাচার রুখে দেয়ার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সাফল্য দেখিয়েছে কুমিল্লা কমিশনারেট। চোরাচালান প্রতিরোধে ব্যাপক উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।বড় ধরনের জরিমানার সম্মুখীন চারটি প্রতিষ্ঠান হলো-৭ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা বিশ্বরোড জাগরজলী এলাকা থেকে শাহে মদিনা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির একটি কার্ভাড ভ্যান আটক করা হয়। যাতে ৫০০ ব্যাগে ১২ হাজার ৫০০ কেজি এলডিপিই দানা পাওয়া যায়, যার মূল্য ১০ লাখ ৮৩ হাজার ২১৯ টাকা। বন্ডেড এসব পণ্যের মালিক রাজধানীর চকবাজারের শেখ তাসিনা করপোরেশন। প্রতিষ্ঠান সাত লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৯ অক্টোবর ঝাগুরঝুলি থেকে তিন হাজার ৮৬৪ কেজি ডুপ্লেক্স বোর্ড বোঝাই সুরমা সর্বর কার্গো সার্ভিসের কার্ভাড ভ্যান আটক করা হয়। পণ্যের মূল্য ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮২ টাকা, পণ্যের মালিক নয়াবাজারের সাদিক এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।বড় ধরনের জরিমানার সম্মুখীন চারটি প্রতিষ্ঠান হলো-৭ সেপ্টেম্বর কুমিল্লা বিশ্বরোড জাগরজলী এলাকা থেকে শাহে মদিনা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির একটি কার্ভাড ভ্যান আটক করা হয়। যাতে ৫০০ ব্যাগে ১২ হাজার ৫০০ কেজি এলডিপিই দানা পাওয়া যায়, যার মূল্য ১০ লাখ ৮৩ হাজার ২১৯ টাকা।
বন্ডেড এসব পণ্যের মালিক রাজধানীর চকবাজারের শেখ তাসিনা করপোরেশন। প্রতিষ্ঠান সাত লাখ ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ৯ অক্টোবর ঝাগুরঝুলি থেকে তিন হাজার ৮৬৪ কেজি ডুপ্লেক্স বোর্ড বোঝাই সুরমা সর্বর কার্গো সার্ভিসের কার্ভাড ভ্যান আটক করা হয়। পণ্যের মূল্য ৬ লাখ ৭৪ হাজার ৬৮২ টাকা, পণ্যের মালিক নয়াবাজারের সাদিক এন্টারপ্রাইজ। এ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে চার লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।আরও চারটি প্রতিষ্ঠান হলো-২৪ জুলাই পদুয়ার বাজার থেকে চার হাজার ৬২৬ কেজি ফেব্রিক্স বোঝাই নিউ সেবা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কার্ভাড ভ্যান আটক করা হয়। পণ্যের মালিক চট্টগ্রামের এস কে ট্রেডার্স, প্রতিষ্ঠানকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১৩ আগস্ট কোর্টবাড়ী থেকে ১২ হাজার ৫০০ কেজি ননী বিহীন গুড়ো দুধ বোঝাই কার্ভাড ভ্যান আটক করা হয়। পণ্যের মালিক চট্টগ্রামের দেশি কনজ্যুমার প্রোডাক্টস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।১০ নভেম্বর পদুয়ার বাজার থেকে তিন হাজার ২২ কেজি ফেব্রিক্স বোঝাই সজিব পরিবহন সংস্থার কার্ভাড ভ্যান আটক করা হয়। পণ্যের মালিক সাভারের আল মাসুম গ্রুপের এ কে এম ওয়্যার লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ১০ নভেম্বর পদুয়ার বাজার থেকে দুই হাজার ২৫ কেজি ফেব্রিক্স বোঝাই রাফা ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের কার্ভাড ভ্যান আটক করা হয়। পণ্যের মালিক সাভারের এ জে সুপার গার্মেন্টস। প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।এ বিষয়ে কুমিল্লা ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী বলেন, চৌকষ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষিত করে যথাস্থানে পদায়ন, গোপন সংবাদদাতা নিয়োজিতকরণের পাশাপাশি বহুমাত্রিক সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের ফলে ঢাকা-কুমিল্লা মহাসড়ক দিয়ে চোরাচালান প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। চোরাচালানিরা নানাভাবে চেষ্টা করে ব্যর্থ হচ্ছে। এ বিষয়ে সাধারণ ব্যবসায়ী ও অংশীজন সন্তোষ প্রকাশ করে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এনবিআর চেয়ারম্যান চোরাচালান ও রাজস্ব ফাঁকির বিরদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা প্রদান করেছেন। এ নির্দেশনার প্রেক্ষিতে কুমিল্লা কমিশনারেট, সদর দপ্তর থেকে সার্বক্ষণিক তদারকি নিশ্চিতকল্পে চারটি প্রিভেন্টিভ টিম গঠন করা হয়।তিনি বলেন, এনবিআরের নির্দেশনা মোতাবেক গোপন সংবাদদাতা নিয়োজিত করে কুমিল্লা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। দিন-রাত প্রহরা ও গোপন সংবাদের আলোকে রাস্তায় ও বিভিন্ন স্থানে সাঁড়াশি অভিযানের মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি অবৈধ পণ্য আটক অভিযান পরিচালিত হয়। ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানে আমাদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আনসার, বিজিবি ও পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতা নেয়া হয়।কমিশনার বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সাফল্য আসে। আমাদের টিমওয়ার্ক গঠন করার মত চৌকষ কর্মকর্তাদের বাছাই করে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করে প্রিভেন্টিভ অভিযানে নিয়োজিত করা হয়। সৎ, দেশপ্রেমিক এবং প্রকৃত ব্যবসায়ীরা কুমিল্লা কাস্টমসের উল্লিখিত কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন গুটিকয়েক চোরকারবারির জন্য ব্যবসায়ী সমাজের সুনাম ক্ষুণ্ন হোক এটা চায় না। চোরাচালানের সাথে সংশ্লিষ্ট এরূপ অবৈধ পরিবহন ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।তিনি বলেন, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার এবং চোরাচালানের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে অবাধে পণ্য প্রবেশ করলে একদিকে যেমন সরকার রাজস্ব হারায় অন্যদিকে তেমন দেশিয় পণ্য অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হয়, যা জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়নের পরিপন্থী। এছাড়া নিয়মিত অভিযান অব্যাহত রাখার ফলে কুমিল্লা কমিশনারেটের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে। কুমিল্লা কাস্টমস রাজস্ব প্রবৃদ্ধি অর্জনে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে।অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল হাকিম বলেন, বৈশ্বিক পরিমন্ডলে বিভিন্ন দেশের কাস্টমস বিভাগ কর্তৃক অনুসুত উত্তম চর্চার ন্যায় কুমিল্লা কাস্টমসও সীমান্তের লিড এজেন্সি হিসেবে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। উদ্যমী, প্রজ্ঞাবান এবং মেধাবী কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে প্রশিক্ষণ প্রদান করত তাঁদের যথাস্থানে পদায়ন করার ক্ষেত্রে কমিশনার কর্তৃক প্রদত্ত নির্দেশনা অনুপুঙ্খ অনুসরণ করা হচ্ছে। কৃতিত্বপূর্ণ সাফল্যের জন্য মাঠ পর্যায়ে কর্মরত রাজস্ব কর্মকর্তা ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাদের নিয়মিতভাবে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। এতে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ এবং কর্মচঞ্চলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকবে। অবৈধ চোরাচালান মূলোৎপাঠনের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব সুরক্ষার পাশাপাশি দেশিয় শিল্পের জন্য সুসম প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি সম্ভব হবে, যা ব্যবসায় বান্ধব পরিবেশ সৃজনের অন্যতম পূর্বশর্ত।