নোয়াখালীতে গণপূর্ত বিভাগের ৭ কোটি টাকার কাজের পাহাড় সমান অনিয়মের এন্থার অভিযোগ

89 Views

সময় ডেক্স,দৈনিক নোয়াখালী সময় ডট.কমঃনোয়াখালীতে গণপূর্ত বিভাগের ৭ কোটি টাকার কাজের পাহাড় সমান অনিয়মের এন্থার অভিযোগ উঠেছে৷ এই নিয়ে জেলা জুড়ে টক অব দ্যা টাউনে পরিনত হয়েছে৷
জানা যায়,ডিসি অফিসের চারপাশ পরিষ্কারে খরচ ১৪ লাখ ১২ হাজার৷সার্কিট হাউজের ফুল বাগানে খরচ ১৪ লাখ ২২ হাজার৷অজুখানা নির্মাণ ও ভবন রংকরণে খরচ ২৪ লাখ ৭২ হাজার৷পরিত্যক্ত বাসভবনের মেরামত ব্যয় ৩২ লাখ ৪৪ হাজার৷নোয়াখালীর গণপূর্ত বিভাগের আরএপিপিসহ (মেরামত) বিভিন্ন প্রকল্পের সাত কোটি টাকার কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গণপূর্তের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এসব কাজ করাচ্ছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে৷ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,২০২২-২৩ অর্থবছরের মেরামত ও সংরক্ষণ কাজের জন্য জেলার ৪৮টি স্থাপনার ৬৮টি কাজের জন্য পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। যার মেয়াদ গত জুনের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত ছিল। এর আগেই সব টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অনেক কাজের কিছুই করা হয়নি। আর করলেও নামমাত্র করে টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।প্রকল্পে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের চারপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও স্তূপ করে রাখা ময়লা অপসারণের খাতে ১৪ লাখ ১২ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর কিছুই চোখে পড়েনি। ওই স্থানে এখনো ময়লার স্তূপ পড়ে আছে। এমন প্রকল্পের খবর জেলা প্রশাসক নিজেও জানেন না৷ নোয়াখালী গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলীর বাসভবনটি ২০১৯ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে সরকার। তা সত্ত্বেও আরএপিপি প্রকল্পে ওই বাসভবনে ৩২ লাখ ৪৪ হাজার টাকার মেরামত ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলীর বাসভবনে ১৫ লাখ ৯৮ হাজার টাকা মেরামত কাজ দেখানো হয়েছে।নোয়াখালী সার্কিট হাউজে ফুল বাগানের মাটি ভরাট, সেলুটিং ডায়াস, প্যারেড গ্রাউন্ড, ওয়াকওয়ে, রাস্তার পাশে ফুলের বেড উঁচুকরণ ও টাইলস স্থাপনে নামমাত্র কাজ করে ১৪ লাখ ২২ হাজার টাকা, গণপূর্ত উপ-বিভাগ-২ এর অফিস কক্ষের ফ্লোর ও ওয়ালে টাইলসকরণ, দরজা-জানালার গ্রিল পরিবর্তনসহ থাইগ্লাস লাগানো ও রংকরণসহ স্যানিটারি কাজে ১৩ লাখ ৬৯ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে।গণপূর্ত বিভাগের অধীন বিভিন্ন ভবন পরিষ্কার ও ধৌতকরণ কাজে ৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা, নোয়াখালী চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনে সিসিটিভি স্থাপনে ১৪ লাখ ৭৫ হাজার, একই স্থানে বিচারপ্রার্থীদের জন্য মাতৃদুগ্ধপান স্থাপন, অজুখানা নির্মাণ ও বিচারপতির আগমনে ভবন রংকরণে ২৪ লাখ ৭২ হাজার টাকা খরচ দেখানো হয়েছে।এ ধরনের বিভিন্ন কাজ দেখিয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক কোটি ৪০ লাখ আট হাজার টাকা, গণপূর্ত বিভাগীয় কার্যালয়ে ৯১ লাখ ৬৮ হাজার, আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে ৫২ লাখ ২৮ হাজার, জেনারেল হাসপাতাল ও সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে ১৬ লাখ ৭১ হাজার, পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ৭৪ লাখ ৬৪ হাজার, জেলা কারাগার ও পাসপোর্ট কার্যালয়ে ৩৭ লাখ ৫৩ হাজার, সদর পৌর বাজার ও সুবর্ণচর ফায়ার সার্ভিসে ২৪ লাখ ২০ হাজার এবং জেলা চিফ জুড়িসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে এক কোটি ২২ লাখ ৮৮ হাজার টাকার কাজের বিল তোলা হয়েছে৷ একইভাবে জেলার স্বাস্থ্যখাতের মেরামতের (কোড-১৩৮) এক কোটি ২৮ লাখ ৮০ হাজার টাকার কাজেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গত ১৮ জুন প্রকল্পের ৯টি কাজের মেয়াদ শেষ হলেও এখনো অনেক কাজ দৃশ্যমান নয়। যেগুলো করা হয়েছে তাও নামমাত্র লোক দেখানো বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরাএক কোটি ২৮ লাখ টাকার কাজের মধ্যে রয়েছে নোয়াখালী সিভিল সার্জন কার্যালয়ের স্যানিটারি ও বিদ্যুতের কাজের সঙ্গে সম্মেলন কক্ষ মেরামতে ২০ লাখ, সীমানা প্রাচীর (বাকি কাজ) নির্মাণ ২০ লাখ, পার্কিংয়ে ফুটপাত টাইলস ও ভবন মেরামতে ১২ লাখ, ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টারের সীমানা প্রাচীর উঁচু করা ও কাঁটাতার স্থাপনে ২০ লাখ, এসি ও পাম্পের মোটর মেরামতে ১০ লাখ, ডিবি বোর্ডের সার্ভিসিং ও আইসোলেশন ভবনের সার্ভিস পরিবর্তনে ছয় লাখ ৮০ হাজার, আবাসিক কোয়ার্টারের টয়লেট, সেপটিক ট্যাঙ্ক ও স্যানিটারি মেরামতে ২০ লাখ, মর্গের পাশে মরদেহ সংরক্ষণ কক্ষ নির্মাণে ১০ লাখ এবং মাইজদী স্কুল হেলথ ক্লিনিকের টিনশেড গ্যারেজ সংস্কারে ১০ লাখ টাকা।এরমধ্যে জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক কোয়ার্টারের সীমানা প্রাচীর উঁচু করা ও কাঁটাতার স্থাপন কাজ এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সীমানা প্রাচীর (বাকি কাজ) নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি। জেনারেল হাসপাতালের মর্গের পাশে মরদেহ সংরক্ষণে ছোট্ট একটি কক্ষ নির্মাণ করা হলেও মাইজদী স্কুল হেলথ ক্লিনিকের টিনশেড গ্যারেজসহ অনেক প্রকল্প যেনতেনভাবে পড়ে আছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার বলেন, নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব তার পছন্দের ঠিকাদার দিয়ে নামমাত্র কাজ করে প্রকল্পের সব টাকা তুলে নিচ্ছেন। এ নিয়ে প্রতিবাদ করায় নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারদের সঙ্গে অশোভন আচরণও করেছেন। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিকার চাই।কথা হয় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃহেলাল উদ্দিন তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে গণপূর্তের প্রকল্পগুলোতে ঠিকাদার তাদের মতো কাজ করেন। তবে সীমানা প্রাচীর উঁচুকরণ ও কাঁটাতার স্থাপন কাজ শেষ হয়নি। বাকি কাজগুলোও ফাইল দেখা ছাড়া বলা যাবে না। কত টাকা বরাদ্দ তাও জানি না।’জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জেলার আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের এখানে কিছু কাজ হয়েছে। তবে কত টাকার কাজ হয়েছে তা গণপূর্ত বিভাগ জানে। আমাদের সঙ্গে টাকা-পয়সার হিসাব নেই।’সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বলেন, ‘দেরিতে হলেও আমাদের এখানে ভেতরের কিছু কাজ শুরু হয়েছে। তবে সীমানা প্রাচীরের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এসব কাজে কত টাকা বরাদ্দ তা আমাদের জানা নেই।’পুলিশ সুপার শহীদুল ইসলাম বলেন, পুলিশ লাইনসে গণপূর্ত বিভাগ কিছু কাজ করেছে। তবে তাতে কী পরিমাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা আমরা বলতে পারবো না।নোয়াখালী গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই-২) আবিদ মইন উদ্দিন বলেন, ঠিকাদারদের গাফিলতিতে অনেক কাজ ধীরগতিতে হচ্ছে। তবে আমরা সব কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি।উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই-১) এমদাদুল হক মিয়া বলেন, ‘আমি সব কাজ দেখি না। তাছাড়া মায়ের অসুস্থতার কারণে ঢাকায় আছি। পরে কথা বলবো।’কাজে অনিয়ম প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগের নোয়াখালীর নির্বাহী প্রকৌশলী সা’দ মোহাম্মদ আন্দালিব বলেন, ‘আরএপিপি প্রকল্পের পাঁচ কোটি ৬০ লাখ টাকার ৬৮টি মেরামত কাজ শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। এতে অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’
পরিত্যক্ত বাসভবন মেরামতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘পরিত্যক্ত ভবনটিতে আমি থাকি। সরকার আমাকে বাসাভাড়া দেয় না। তাই বলে আমি ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করতে পারি না। এজন্য ভবনটি মেরামত করা হয়েছে৷ এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, গণপূর্ত বিভাগ কিছু কাজ করেছে। তবে ১৪ লাখ ১২ হাজার টাকার কাজে অফিসের আঙিনা পরিষ্কার করেছে এটা প্রথম আপনার কাছে শুনলাম। বরাদ্দের কাগজটা আমাকে পাঠাবেন। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খোঁজ নেবো।’
জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগের কুমিল্লা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নুরুল আমিন মিয়া বলেন, ‘আমরা শুধু প্রকল্প অনুমোদন করে দেই। বাকি কাজ সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী করেন। নোয়াখালীতে কোনো কাজ নিয়ে অভিযোগ করা হলে তা খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণ পেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *